গত বছর প্রায় ৮০ হাজার অভিবাসী মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। ইউরোপে আসা এই অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেক এসেছে আফ্রিকার সাব সাহার অঞ্চলের দেশগুলো থেকে। করোনা মহামারি এবং সীমান্তে ব্যাপক নজরদারির কারণে অভিবাসী প্রবেশের এই হার ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ২০% কমে গেছে।
কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে আবার স্পেনের ক্যানারি দ্বীপ এবং ভূমধ্যসাগর হয়ে অভিবাসী আসার হার বাড়তে শুরু করেছে। ইইউ-এর সীমান্তরক্ষা এজেন্সি ফ্রন্টেক্স জানিয়েছে, এই বছর প্রথম চার মাসে অভিবাসী প্রবেশের হার ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা, বেকারত্বের পাশাপাশি ইউরোপের উন্নত জীবন এবং সামাজিক সুবিধা গ্রহণের উদ্দেশ্যেও অভিবাসীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা করেন।
আশঙ্কা থাকলেও কমেনি রেমিট্যান্স
১২ মে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই চমকপ্রদ তথ্যটি উঠে এসেছে। বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ এবং অভিবাসন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ধারনা করেছিল করোনা মহামারির কারণে ইউরোপের অভিবাসীরা আগের বছরের মতো দেশে টাকা পাঠাতে সক্ষম হবেন না।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালে অভিবাসীরা ৫৪০ বিলিয়ন ডলার তাদের দেশে পাঠিয়েছে, যেটি স্বাভাবিক রেমিট্যান্সের চেয়ে মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ কম। যেটি ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার চেয়েও বেশ কম। অনেক দেশে প্রবাসী আয়ের এই হার বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সরাসরি বিনিয়োগের হারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
তবে মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ করে তেলসমৃদ্ধ দেশসমূহ এবং রাশিয়া থেকে এশিয়ায় রেমিট্যান্সের হার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপ এবং পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে রেমিট্যান্সের হার ছিল স্বাভাবিক।
বেড়েছে সাব সাহার অঞ্চলের দেশগুলোতে রেমিট্যান্স প্রেরণের হার
নাইজেরিয়াকে বাদ দিলে পশ্চিম আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলের প্রায় সবগুলো দেশে প্রবাসী আয়ের হার প্রায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। এ দেশগুলো বিশ্বব্যাংকের তালিকা অনুযায়ী বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের অন্তর্ভুক্ত। যেখানে অর্থনৈতিক স্থিতি খুবই দুর্বল। নাইজেরিয়ার স্থানীয় মুদ্রার দরপতনের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহের হার প্রায় ২৮ ভাগ কমে গেছে।
অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য মহামারি কি কোন পরিবর্তন এনেছে?
বৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে অভিবাসী আসার হারে বেশ পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে অনেক কমেছে। করোনা মহামারিতে অভিবাসন প্রবাহ কমে আসায় অনেক দেশে জনসংখ্যার বিকাশ এবং সামাজিকভাবে অবদানের জন্য অভিবাসনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
কিন্তু আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে অভিবাসনবিরোধী প্রচারণা দেখা যায়। যেমন ফ্রান্সে অভিবাসন বিষয়ক কমিশনার ফ্রঁসোয়া বাইররু ছাড়া কেউই ব্যাপকহারে অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে সায় দেননি। ফ্রঁসোয়া বাইরুর মতে, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি সহ আর্থ সামাজিক বাস্তবতায় অবশ্যই অভিবাসনের প্রয়োজন রয়েছে।
প্রতিবেদনঃ রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফই)